◀ Back to blog

আপনি কি দক্ষিণ কোরিয়াতে পড়তে আগ্রহী? তাহলে আপনি সঠিক আর্টিকেলের সন্ধান পেয়েছেন।

পোস্ট করা হয়েছে: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
লেখকঃ জুলহাস সুজন
[এই আর্টিকেলটি কপি বা শেয়ার করার ক্ষেত্রে আমার এই সোর্সকে মেনশন করার জন্য অনুরুধ করা হলো। ]

[ রেফারেন্স: জুলহাস সুজনের ব্যাক্তিগত ওয়েবসাইট থেকে - www.julhas.com/bachelor-in-korea.php ]

আমি জুলহাস সুজন, জাতিসংঘের চার্টার্ড প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট এর হেড কোয়াটার, সোল্, সাউথ কোরিয়াতে কর্মরত আছি। কিভাবে ইন্টারন্যাশনাল চাকুরী নিয়ে বিদেশে আসা যায়, সেই অভিজ্ঞতা অন্য একটি আর্টিকেলে শেয়ার করবো। এই আর্টিকেলে কিভাবে ব্যাচেলর এর জন্য দক্ষিণ কোরিয়াতে আসবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমার ছোট বোন সেজং ইউনিভার্সিটিতে সেপ্টেম্বর ২০২২ সেশনে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ ব্যাচেলর শুরু করেছে। তার ব্যাচেলর শুরুর জন্য প্রতিটা ধাপে (আর্টিকেলে ধাপগুলো পেয়ে যাবেন) আমি নিজে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে লিখছি। কোনো তথ্যে দ্বিমত থাকলে অথবা বিস্তারিত জানলে চাইলে আমাকে ইমেইল করতে পারেন (julhaspustcse@gmail.com)।


শুরুতেই বলে রাখা ভালো, কোরিয়াতে ভিসা পাওয়ার আগে অনেক ধরণের পেপার্স রেডি করতে হয়, আর যা করতে গিয়ে আপনি নানা সমস্যার সুম্মুখীন হবেন যা পৃথিবীর আর কোনো দেশের স্টুডেন্ট ভিসার জন্য করতে হয় কিনা আমার জানা নেই, তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই আমি ধাপে ধাপে সব বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করবো এবং কিছু প্রয়োজনীয় পেপার শেয়ার করবো। আমার এই আর্টিকেল এর প্রতিটা ধাপ অনুসরণ করে প্রস্তুতি নিন, দেখবেন সব কিছু অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। আপনার জন্য আগাম শুভ কামনা!


দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে

১০০% পুরুষ এবং মহিলার শিক্ষিত দেশ দক্ষিণ কোরিয়াতে শিক্ষা খাতে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উভয় সমানভাবে অবদান রাখছে। উভয় খাতে সরকার অর্থ প্রদান করে, যদিও বেসরকারীর চেয়ে সরকারিতে একটু বেশি অর্থ দেওয়া হয়। বিশ্বে দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চমানের শিক্ষার ব্যাপক সুনাম রয়েছে। এখানে প্রতিটি পরিবারে উচ্চ শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানে ব্যাচেলর শেষ করে মাস্টার্স বা পিএইচডি এর জন্য আমেরিকা, কানাডা বা ইউরোপে আবেদন করা অনেক সহজ এবং তারা কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যাপক গুরুত্ব দেয়। এখানে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমেরিকা/ কানাডা/ অস্ট্রেলিয়া থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরেছেন এবং প্রায় সবগুলো ভালো কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয়ের MoU আছে। যেমন কোরিয়ার ১ নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সোল্/ সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, যা কিউএস গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি রাঙ্কিং এ ২৯ তম। এই ১টা উদাহরণ থেকে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন শিক্ষা খাতে তারা কতটা এগিয়ে। বাকিগুলোর রাঙ্কিং দেখতে গুললে সার্চ করুন।

আপনি কিভাবে সাবজেক্ট পছন্দ করবেন?

দক্ষিণ কোরিয়াতে অনেক বিষয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব। তবে এখানে ব্যাচেলর জন্য শতভাগ স্কলারশিপ নেই বললেই চলে। তাই আপনাকে সেলফ ফান্ডিং এ আসতে হবে। আপনি যে বিষয়ে পড়তে চান সেটি আগে ঠিক করে নিন। এর পরে আপনাকে চিন্তা করতে হবে আপনি রাজধানী সোলে বা সিউলে পড়বেন না বাহিরে পড়বেন। সোল্ ব্যাপক ব্যায়বহুল শহর এখানে অনেক অর্থের প্রয়োজন থাকা খাওয়ার জন্য। আপনার সামর্থের মধ্যে থাকলে আপনি সোলের ইউনিভার্সিটি গুলোতে আপনার পছন্দের বিষয়টি খুঁজতে শুরু করুন। ওয়েবসাইটে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন যেমন কোন সময় সেশন শুরু হবে, কি কি রিকোয়ারিমেন্টস, কতটাকা টিউশন ফী, প্রতি সেমিস্টাররে কত পার্সেন্ট স্কলারশিপ পাবেন ইত্যাদি।

IELTS কি আবশ্যক?

হ্যাঁ, প্রায় সবগুলো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে IELTS আবশ্যক তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে IELTS ছাড়াও আসা যায়, তবে TOPIK থাকতে হবে । IELTS এর অনেক সুবিধা আছে যেমন আপনি ৩০-৬০% পর্যুন্ত স্কলারশিপ পেতে পারেন, প্রথম সেমেস্টারে। IELTS স্কোর ৬.০ হলে আপনি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন।

আপনাকে কি কোরিয়ান ভাষা (TOPIK) শিখে আসতে হবে?

ভাষা শিক্ষা বিষয়টি যদিও সহজ নয়, তবে কোরিয়ান ভাষা শিখতে পারলে খুবই ভালো। এখানে সবকিছু কোরিয়ান ভাষায় লিখা। আপনি কোন মিডিয়াম/ ভার্শনে পড়তে আসবেন কোরিয়ান নাকি ইংরেজি সেটির উপর নির্ভর করছে কোরিয়ান ভাষা শিক্ষার বিষয়টি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে TOPIK স্কোর চাওয়া হয়। TOPIK বিষয়ে বিস্তারিত গুগল থেকে জেনে নিন।

ব্লক মানি বা ব্যাংকে কত টাকা দেখাতে হবে?

২০,০০০ ডলার এর সমপরিমাণ টাকা আপনার একাউন্ট এ থাকতে হবে। তবে কেউ স্পনসর হলে তার একাউন্টেও সমপরিমাণ টাকা থাকতে হবে। অনেক ব্যাংক এই বিষয়ে সাহায্যও করে। ভিসা পাওয়ার আগে তারা লোন দিয়ে থাকে। তবে আপনি যে ভাবেই আপনার একাউন্টে এই টাকা দেখান না কেন, সেটি কমপক্ষে ৬ মাস ধরে ট্রানজেকশন থাকতে হবে। আমরা বেশ কিছু ভিসা রিজেক্টেড ক্যান্ডিডেট এর সাথে আলাপ করেছি তাদের ক্ষেত্রে এইটা একটি বড় সমস্যা ছিল। অনেকে কোনো সোর্স থেকে একবারে ২০,০০০ ডলারের সমপরিমাণ ট্রানজেকশন করেছিলেন এবং তাও ভিসা আবেদনের কিছুদিন আগে থেকে। আমার পরামর্শ হবে ৬ মাস আগে ক্যান্ডিডেট এর একাউন্ট ওপেন করে সেখানে একটু একটু করে প্রতি মাসে ট্রান্সফার করা।

আপনি কি পার্টটাইম কাজের সুযোগ পাবেন?

হাঁ, আপনি চাইলে এখানে পার্টটাইম কাজ করতে পারবেন। রেস্টুরেন্টে কাজ করলে ঘন্টায় আপনি ৭,০০০-১৩,০০০ ওন বা ১০ ডলার ইনকাম করতে পারবেন। আপনি দিনে ৫ ঘন্টা কাজ করলে মাসে ১,০০০ ডলার (প্রায় ১ লক্ষ টাকা) অনায়াসে ইনকাম করতে পারবেন, যা দিয়ে সচ্ছলভাবে আপনার থাকা, খাওয়া এবং টিউশন ফি দিতে পারবেন।

চলুন এবার দেখে নেই কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন:

ধাপ-১: প্রথমে IELTS এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিন। IELTS আপনি বাসায়ও পড়তে পারেন অথবা যে কোনো সেন্টারে ভর্তি হতে পারেন যেমন ব্রিটিশ কাউন্সিল, সাইফূর'স, GREC, মেন্টর্স। এইগুলোর যেকোনো একটিতে ভর্তি হয়ে সিলেবাসটি ভালোমতো শেষ করুন এবং বাসায় সে অনুসারে কিছুদিন প্রাকটিস করুন। ফাইনাল পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশনের আগে আপনি কিছু মক-টেস্ট দিয়ে নিজের প্রস্তুতি যাচাই করে নিতে পারেন। মক-টেস্ট এর জন্য মেন্টর্স কে বেছে নিতে পারেন।

ধাপ-২: প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র গোছানো - IELTS এর পাশাপাশি আপনি সব পাপেরস গুলো রেডি করুন। যেমন:

২.১ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষার সনদ এটাস্টেশন: আপনি যে বোর্ড থেকে পাশ করেছেন সেই বোর্ডে গিয়ে আপনাকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সনদ সত্যায়িত করতে হবে। ঢাকা বোর্ড: ৫-জয়নাগ রোড, বাকশি বাজারে। যেভাবে সত্যায়িত করবেন:

  • কয়টা ইউনিভার্সিটিতে আপনি আবেদন করবেন সে অনুসারে আপনার মূল সনদ ফটোকপি করুন
  • ঢাকা বোর্ড লেভেল ৪ এ গিয়ে প্রথমে আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করুন এবং আপনার সার্টিফিকেট অনুসারে সেটি পুরুন করুণ। ফর্ম সংগ্রহ করার সময় আপনি কত কপি সত্যায়িত করতে চান সেটি বলতে হবে।
  • এবার পাশের যেকোনো একটি কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে সোনালী ব্যাংকের ডিপোজিট স্লিপ নিন। আপনি কত কপির জন্য নিবেন সেটি ওনাদের বলুন এবং সে অনুসারে আপনাকে ডিপোজিট স্লিপ দিবেন এবং আপনাকে ২৫ টাকা করে দিতে হবে প্রতি কপির জন্য। কম্পিউটার এর দোকানে ওনারা আপনার মাধ্যমিক/ উচ্চমাধমিক সনদ অনুসারে ফর্ম পূরুন করে দিবেন।
  • এখন ফর্মগুলো নিয়ে সোনালী ব্যাংকে যেতে হবে। সোনালী ব্যাংক ঢাকা বোর্ডে ভিতরে প্রবেশ করার সময় হাতের বাম দিকে পড়বে। নির্ধারিত ফি সহ ফর্মটি ব্যাংকে জমা দিন।
  • টাকা জমা দেওয়ার পরে ডিপোজিট স্লিপটি নিয়ে আবার লেভেল-৪ এ যেতে হবে। এখানে আপনার সবগুলো মূল সনদ এবং ফটোকপি জমা দিন।
  • জমা দেওয়ার পরে ৭-১০ দিন সময় নিবে। ওনারা আপনাকে একটা স্লিপ দিবেন সেটি নিয়ে নির্ধারিত দিনে পেপার্স সংগ্রহ করুন।
  • পেপার্স সংগ্রহ করার পরে একাধিকবার ভালো করো চেক করে নিন। সব সীল এবং আপনার অরিজিনাল সার্টিফিকেট পেয়েছেন কি না।

বিঃ দ্রঃ এখানে দালালের কোনো অভাব নেই। ভুলেও কোনো দালালের ফাঁদে পা দিবেন না। এখানে বেশ টাকার লেনদেনও হয়। আপনি ৭-১০ দিন অপেক্ষা করতে না চাইলে দরবেশদের কিছু হাদিয়া দিলে তা ২/৩ দিনের মধ্যেই করে দিবে। এমনও আছে ২/৩ হাজার টাকার বিনিময়ে একদিনের মধ্যে করে নিয়েছে। কেউ আবার আমার কাছে প্রমাণ চেয়ে লজ্জা দিয়েন না। আপনি বোর্ডে পা দিলেই বুঝবেন আমি কতটা বাস্তব বলেছি। তবে সবার ক্ষেত্রে বিষয়টি এমন নাও হতে পারে। যেমন আমার একজন খুব উঁচু পর্যায়ে পরিচিত ছিলেন রাজশাহী বোর্ডে, সেই কারণে আমি একদিনের মধ্যে রাজশাহী বোর্ড থেকে সত্যায়িত করতে পেরেছি।

২.২ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এটাস্টেশন:

  • ঢাকা বোর্ড থেকে এটাস্টেশন করার পরে আপনাকে এবার শিক্ষা বোর্ডে যেতে হবে।
  • মতিঝিল সচিবালয়ে গেট-১ এ যেতে হবে।
  • সকাল ১০ টার পর থেকে তাঁরা পেপার জমা নেন। আপনার সবগুলো বোর্ড সত্যায়িত কপি এবং মূল সনদ এখানে জমা দিন।
  • এখানে একদিন সময় নিতে পারে।
  • অনেকসময় একই দিন বিকেলে ৩ টার সময় থেকে ফেরত দেয়।
  • ফেরত নিয়ে আপনাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যেতে হবে।

বিঃ দ্রঃ এখানে আরো বড় দরবেশ এর দেখা পাবেন, ভুলেও ফাঁদে পা দিবেন না। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এখানে পেয়ে যাবেন।

২.৩ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এটাস্টেশন:

  • এখানে আপনি সর্বোচ্চ ৫ কপি একদিনে জমা দিতে পারবেন।
  • আপনার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এর একসেট কপি করতে হবে এখানে জমা দেওয়ার জন্য।
  • যিনি জমা দিবেন তার ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর ফটোকপি জমা দিতে হবে।
  • জমা দিন এবং ৪ টা পর্যুন্ত অপেক্ষা করুন।
  • ৪ টার সময় (এখন সময় একটু পরিবর্তন হতেও পারে) আপনাকে লাইনে দাঁড়াতে হবে এবং মাইকে আপনার সিরিয়াল নম্বর বললে কাউন্টার থেকে আপনার পাপেরস সংগ্রহ করতে হবে।

বিঃ দ্রঃ এই প্রক্রিয়াটি শতভাগ ক্লিন এবং কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই আপনি পেয়ে যাবেন। আমার কাছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই প্রক্রিয়াটি অসম্ভব ভালো লেগেছে। এখানে আপনি অনেক সময় নিয়ে বসতে পারবেন, ফ্যান আছে, টয়লেট আছে যা স্বস্তিদায়ক বিশেষ করে বাচ্চা, মহিলা বা বয়স্ক কেউ সাথে থাকলে তাদের জন্য ভালো। কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ না দিলেই নয়। এখানে কোনো দরবেশও ঝামেলা করবে না।

২.৪ কোরিয়ান এম্বাসি এটাস্টেশন:

  • প্রথমে আপনাকে এম্বেসী থেকে সময় নিতে হবে আর সেটির জন্য আপনাকে একটি ইমেইল করতে হবে এই ঠিকানায়: consuldhaka@mofa.go.kr।
  • ইমেইল এ আপনার নাম, পাসপোর্ট নম্বর এবং কোথায় আবেদন করেছেন সে সম্পর্কে লিখে একটি তারিখের জন্য আবেদন করুন।
  • এম্বেসী থেকে আপনাকে ইমেইল এর রিপ্লায় দিয়ে সাথে একটি তারিখ ও সময় বলে দিবে। সঠিক সময়ে আপনার সবগুলো কাগজ নিয়ে উপস্থিত হবেন।
  • পাসপোর্ট সাথে নিতে হবে।
  • ইমেইল এর একটি কপি সাথে প্রিন্ট করে নিতে পারেন অথবা মোবাইল এ থাকলেও চলবে, এম্বাসিতে গিয়ে প্রথমে ইমেইলটি দেখতে হবে। এখানে ৫ কপি ২৫০০ টাকার মতো নিবে, সাথে খুরচা টাকা রাখুন।
  • এম্বাসিতে জমা দিলে ৪/৭ দিন সময় নিবে আপনার পাপার্স গুলো ভেরিফাই করার জন্য।
  • এটাস্টেড হয়ে গেলে আপনার মোবাইলে মেসেজ করবে ফেরত নেওয়ার জন্য।
  • নির্দেশিত সময়ে পেপার্স গুলো সংগ্রহ করুন।

দীর্ঘ এই সময়টি বেশ বিরক্তিকর এবং ধর্য ধরে প্রতিটি ধাপ শেষ করতে হবে নতুবা আপনি পরের ধাপে যেতে পারবেন না। এই সময়ের মধ্যে আপনি IELTS এর প্রস্তুতি ভালোমত নিতে থাকুন এবং কনফিডেন্ট হলে পরীক্ষা দিয়ে দিন।

এবার আপনার পুরো মনোযোগ থাকতে হবে IELTS এর উপর। IELTS এর রেজাল্ট ছাড়া আপনি ভালো ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করতে পারবেন না যা আমি আগেই বলেছি ।

ধাপ-৩: ভার্সিটিতে আবেদন করা

  • এইসময়ের মধ্যে নিশ্চয় আপনি কোন বিষয়ে কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়বেন তা ঠিক করে ফেলেছেন। যদি ঠিক না করে থাকেন তবে দ্রুত নির্বাচন করে নিন।
  • এই বিষয়ে যদি কোনো এজেন্সির সাহায্য লাগে তবে তা নিতে পারেন। তবে যাচাই বাছাই করে এজেন্সী নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশে অনেক ভুয়া এজেন্সী এবং প্রলোভন দেখানো প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো থেকে আপনাকে সাবধান থাকতে হবে। আমরা একটি এজেন্সির সাহায্য নিয়েছিলম ইউনিভার্সিটিতে আবেদন এবং ভর্তি হওয়ার বিষয়ে।
  • যে ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করবেন তাদের ওয়েবসাইট এ গিয়ে পুরো প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করুণ। আমি এখানে আর বিস্তারিত বলছি না।
  • আবেদনের সময় আপনাকে মাস্টার অথবা ভিসা কার্ডে পেমেন্ট করতে হবে। ১২০-১৪০ ডলারের বেশি আবেদন ফী হয় না।
  • অনালাইনে আবেদন শেষ করার পরে আপনাকে এটাস্টেড পাপার্স গুলোর একটি সেট (মূল সনদ বাদে) DHL এর মাধ্যমে ইউনিভার্সিটিতে পাঠাতে হবে। ইউনিভার্সিটিতে পাঠানোর পরে ইমেইল করবেন এবং DHL এর তথ্য দিয়ে রাখেবন।
  • যারা নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত এর দিকে থাকেন তারা উত্তরা ৪ নং সেক্টর থেকে DHL করতে পারবেন। এখানে খরচ নিবে ২৫০০-৪০০০ রেঞ্জ এর ভিতরে। ইউনিভার্সিটিতে আবেদনের ক্ষেত্রে তাদের ৩০-৪০% ডিসকাউন্ট আছে।
  • ইউনিভার্সিটি পেপার গুলো হাতে পেলে আপনাকে ইমেইল এর মাধ্যমে নিশ্চিত করবে।
  • এবার অপেক্ষা করুন রেজাল্টের জন্য।

আপনি একই সাথে ২/৩টি ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করুন। অর্থাৎ, আপনার যে কয়টা কপি এটাস্টেড করেছেন তার একটি কপি নিজের কাছে রেখে বাকি গুলো দিয়ে আবেদন করতে পারবেন। একটি কপি আপনাকে ভিসা আবেদনের জন্য রাখতে হবে।

ধাপ-৪: ভর্তি হওয়া এবং টিউশন ফি প্রদান:

  • ইউনিভার্সিটি থেকে আপনি এপ্লিকেশন কনফার্মেশন বা ফাইনাল রেজাল্ট পেলে আপনাকে টিউশন ফি প্রদান করতে হবে।
  • টিউশন ফি আপনি দুই ভাবে প্রদান করতে পারেন:
    ১) বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ইউনিভার্সিটির একাউন্ট পাঠাতে পারবেন কিন্তু সেক্ষেত্রে স্টুডেন্ট ফাইল ওপেন করতে হবে। পরের ধাপে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
    ২) কোরিয়াতে পরিচিত কেউ থাকলে তার একাউন্ট থেকে সরাসরি পাঠাতে পারবেন এবং এটি সবচেয়ে সহজ উপায়। কেননা অধিকাংশ সময় খুব অল্প সময় দেওয়া থাকে পেমেন্ট এর জন্য, যেমন ৪-৫ দিন। এর মধ্যে বাংলাদেশে সরকারি ছুটি পরে গেলেই ঝামেলা।
  • ইউনিভার্সিটি পেমেন্ট রিসিভ করার পরে আপনাকে ইমেইল এ কনফার্মেশন জানাবে।
  • ইউনিভার্সিটি থেকে অফার লেটার সংগ্রহ করুন, যদিও আপনার ইমেইলে ওনারা পাঠাবেন। তবে দেরি হলে যোগাযোগ করুন।

ধাপ-৫: স্টুডেন্ট ফাইল ওপেনিং

  • আপনার যে ব্যাঙ্ক এ একাউন্ট আছে অর্থাৎ ২০,০০০ ডলার যেখানে ডিপোজিট করা আছে সেই ব্যাংকেই স্টুডেন্ট ফাইল ওপেন করুন।
  • আমরা সিটি ব্যাংক বনানী শাখা থেকে স্টুডেন্ট ফাইল করেছি। এর জন্য যা যা সাথে নিতে হবে: * পাসপোর্ট এর মূল কপি এবং ফটোকপি
  • * অফার লেটার/ এডমিশন লেটার (C o A ) বা কনফার্মেশন অফ এডমিশন
    * ব্যাংকে গেলে তারা ৩ টা ফর্ম দেবে, সেটি পুরুন করতে হবে।

ধাপ-৬: নোটারাইজ

আপনি নিচের পেপারস গুলো নোটারাইজ করে নিন:
  • IELTS/ TOPIK এর ফটোকপি।
  • আপনার জন্মনিবন্ধন।
  • আপনার পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন।
  • আপনার NID ।
  • আপনার পিতা-মাতার NID।
  • NID ইংরেজিতে ট্রান্সলেট করে তারপরে নোটারাইজ করতে হবে। ট্রান্সলেটেড কপি ঐ ফার্ম এর লেটারহেড এ করতে হবে।
  • Family relationship certificate

ধাপ- ৭: এম্বাসিতে ভিসা আবেদন -এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সেনসিটিভ ধাপ। ভিসা আবেদনের জন্য নিচের চেকলিস্টটি রেডী করুন:

1. University selection
2. Schedule to Embassy for Certificate verification 
3. Visa Application Form fill-out 
4. Admission documents with COA - certificate of admission
5. University payment confirmation slip/ invoice 
6. Embassy attested documents (within 6 months)
7. IELTS photocopy
8. IELTS Notarized copy
9. All original academic documents 
10. Passport main copy 
11. Passport Photocopy
12. Sponsor’s Bank statement (within 1 month) 
13. Sponsor’s Bank solvency certificate ( >= $20,000)
14. Extra-curricular activities/ certificate
15. Police clearance (https://pcc.police.gov.bd/ords)
16. Medical test certificate (Prescription point-Banani/ Dhanmondi)
17. Two letters of recommendation from School/ College/ University (if masters)
18. Sponsorship declaration, if someone wants to be a sponsor like Father/ Mother/ Sister/ Brother 
19. Sponsor's NID
20. Sponsor's TIN
21. Sponsor's Trade License (Translate to English and notarize)/ Job certificate 
22. Family relationship certificate 
23. Parents NID (Translated and Notarized)
24. Parent's Birth Certificate (Translated and Notarized)
25. Vaccination card (Must be three times vaccinated including Booster)
26. Quarantine form fill-out
27. Visa Application Appointment - send email as like paper verification 
28. Visa Fee 5100/-
29. Dormitory/ accommodation/ living arrangement 
30. Air Ticket booking
31. One picture 35/45mm 

ধাপ- ৮: ইমিগ্রেশনের জন্য যা যা লাগবে

• Passport 
• Passport photocopy 
• Visa main copy and photocopy  
• PCR test report within 48 hours
• Required docs for PCR:
	o Original passport 
	o Passport copy 
	o Air ticket 
	o Vaccine Certificate 
	o Printed Air ticket
• Print PCR certificate from covid19reports.dghs.gov.bd website 
• Print PCR clinical test report 
• University/ organization offer letter (Not mandatory but good to keep)
• NID and copy 

ধাপ- ৯: ভিসা পাওয়ার পরে ইউনিভার্সিটি কে অবগত করা, অনলাইন ওরিয়েন্টেশন এবং কোর্স এনরোলমেন্ট

  • ইউনিভার্সিটির একটি নিদিষ্ট ইমেইল থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করবেন। আপনি ভিসা পাওয়ার সাথে সাথে তাদের ওই ইমেইলে জানিয়ে দিন।
  • অনেক সময় অনালাইনে এক বা একাধিক ওরিয়েন্টেশন সেশন হয়ে থাকে। সেখানে আপনাকে বিস্তারিত বিষয় সমূহ অবগত করা হবে, যেমন কিভাবে কোর্স রেজিস্ট্রেশন, এলিয়েন কার্ড রেজিস্ট্রেশন, করোনা টিকা, ভিসা রিনিউ, ইউনিভার্সিটি ডিপার্টমেন্ট, বেসিক রুলস ইত্যাদি।
  • এর পাশাপাশি ইউনিভার্সিটি আপনাকে কোর্স এনরোলমেন্ট এর জন্য যাবতীয় লিংক এবং ডকুমেন্টস ওই ইমেইল এ পাঠাবে। আপনি সব সময় ইমেইলে আপডেটেড থাকবেন।

ধাপ- ১০: টিকেট কনফার্মেশন এবং টাকা ওঁনে কনভার্সন

বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকটি রুটে কোরিয়া আশা যায়। যেমন:
  • ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ইনচন (কোরিয়া): এটি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স। আমি এসেছি, দারুন সার্ভিস। অনলাইন থেকে অথবা কোনো এজেন্সী থেকে টিকেট নিতে পারেন। আপনি সর্বোচ ৩০ কেজি ব্যাগ নিতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখবেন কম পক্ষে ২টি ব্যাগে আলাদা করে ৩০ কেজি নিবেন। একটি ব্যাগে কোনো ভাবেই নিবেন না।
  • ঢাকা-মালয়েশিয়া-ইনচন: মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সও বেশ ভালো। এখানে ২০ কেজি এবং ৩৫ কেজি লাগেজ নিতে পারবেন। তবে ৩৫ কেজি নিলে অবশ্যয় ২টি ব্যাগে নিবেন। আমার বোনের ক্ষেত্রে ১টি ব্যাগে ৩৩কেজি নেওয়াতে অনেক ঝামেলা হয়েছে। অবশেষে নতুন ব্যাগে আলাদা করে ১০কেজি নিতে হয়েছিল।
  • ঢাকা-থাই-ইনচন: এই রুটেও আসতে পারেন। আমি শুনেছি ভালো তবে অভিজ্ঞতা নেই।
  • চাটার্ড ফ্লাইট: আপনি ডিরেক্ট আসতে পারবেন ঢাকা থেকে ইনচন। কিছু এজেন্সী এটি ম্যানেজ করেন। কেউ এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে আমাকে জানাতে পারেন। আমি কন্টাক্ট তথ্য দিয়ে দিবো।
  • কিছু টাকা যেমন ২০ হাজার টাকা আপনি ওঁনে এক্সচেঞ্জ করে নিয়ে আসবেন। এয়ারপোর্ট থেকে আপনার বাসা পর্যুন্ত ভাড়া বাবদ ৯০,০০০ - ১,০০,০০০ ওঁন নেবে। বাসায় পৌঁছানোর পরে কিছু কেনা কাটারও দরকার থাকতে পারে। এখানে আপনি ইন্টারন্যাশনাল কার্ড থেকে পেমেন্ট করতে পারবেন অথবা ওঁনে পেমেন্ট করতে হবে।

ধাপ- ১১: PCR টেস্ট এবং সেফ ট্রাভেল

  • ৪৮ ঘন্টা আগে আপনাকে PCR টেস্ট করতে হবে। PCR টেস্ট এর জন্য আপনি মহাখালী icddr'b তে যেতে পারেন। খেয়াল রাখেন ৪৮ ঘন্টার বাহিরে যাতে না হয়।
  • আপনি কোনো ভাবে কোনো বীজ, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ, মাংস জাতীয় খাবার, আম, কাঁঠাল, বটি, চাকু এইসব সাথে আনবেন না।
  • প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট ২/৩ দিন আগে প্রিন্ট করে নিন। (ধাপ- ৮ দেখে নিন)

ধাপ- ১২: কোরিয়ার এয়ারপোর্টে নামার পর যা যা করতে হবে

  • এখানে বিমান থেকে নেমে ২টা ফর্ম পূরুন করতে হবে। আগে থেকে QR কোড থাকলে একটি ফর্ম পূরুন করতে হবে না। বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় আপনি QR কোড অনলাইনে পূরুন করতে পারেন।
  • এখানে এন্ট্রান্স এর জন্য আপনার ইনফর্মাশন গুলো চেক করবে, ছবি নিবে এবং পাসপোর্ট চেক করে এন্ট্রি পারমিশন দিবে।
  • এবার লাগেজ সংগ্রহ করুন।
  • যারা শর্ট টার্ম এর জন্য আসবেন তাদের কে COVID-১৯ এর টেস্ট করতে হবে। টেস্ট করার জন্য আপনাকে এক্সিট এর উল্টোদিকে বুথ এ যেতে হবে। বুথে গেলে আপনি সব ধরণের সহায়তা পাবেন।
  • এখানে ট্যাক্সি নিতে পারবেন।

কোরিয়াতে আপনাকে স্বাগতম!

বিস্তারিত কোনো বিষয়ে জানতে আমাকে ইমেইল করুন: julhaspustcse@gmail.com।
[এই আর্টিকেলটি কপি বা শেয়ার করার ক্ষেত্রে আমার এই সোর্সকে মেনশন করার জন্য অনুরুধ করা হলো। ]

[ রেফারেন্স: জুলহাস সুজনের ব্যাক্তিগত ওয়েবসাইট থেকে - www.julhas.com/bachelor-in-korea ]